নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্য
- By Jamini Roy --
- 19 November, 2024
আসন্ন নির্বাচন, সংস্কার কার্যক্রম এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাকে সম্মান করছি। বিএনপি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, সব দল নির্বাচন করবে। আমরা দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করতে পারি না।"
তবে নির্বাচন নিয়ে দেরি করার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা শুধু একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নই; আমাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশকে সংস্কার করা। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।"
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "ভারত যদি রাজনৈতিক কারণে তাকে আশ্রয় দেয়, এটি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।" তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব আইনি উপায় গ্রহণ করবে তার সরকার।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, "ভারত আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাদের যুক্ত হওয়া উচিত এবং একসঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার উদযাপন করা উচিত।" তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং দুই দেশের যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সরকার মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ধর্মীয় সহিংসতা প্রতিরোধ করা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার।"
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে চলমান সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, "খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।" তিনি জানান, আর্থিক খাতের সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সফলতা পেতে শুরু করেছে এবং উন্নয়ন সহযোগীরা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
ড. ইউনূস নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাই। তবে সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনতে পারবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।"
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ শুধু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোতে স্থায়ী সংস্কার আনয়ন। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে তার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক বলে প্রতীয়মান।